কঙ্গনা রানাউতের চড় কান্ডে উত্তাল গোটা দেশ। ঘটনার পক্ষে বিপক্ষে বিভিন্ন রকম তর্ক বিতর্ক উঠে আসছে। তবে এ বিষয়ে খুব বেশি প্রতিক্রিয়া মেলেনি বলিউডের। আর তাই নিয়েই ক্ষোভ অভিনেত্রীর মনে। সমাজমাধ্যমে এই নিয়ে একাধিক পোস্টও করেন অভিনেত্রী। নিজের ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইলে অভিনেত্রী লেখেন, “আপনি যখন কারও উপর সন্ত্রাসবাদী হামলা উদ্যাপন করেন, তা হলে নিজেও সেই দিনের জন্য প্রস্তুত থাকুন, এটা আপনার কাছেও ফিরে আসবে।” যদিও পরে সেই পোস্ট মুছে দেন তিনি।
চণ্ডীগড় বিমানবন্দরে সিআইএসএফের এক মহিলা কনস্টেবলের হাতে চড় খান অভিনেত্রী তথা হিমাচল প্রদেশের মাণ্ডী থেকে বিজেপির টিকিটে জেতা কঙ্গনা রানাউত। কৃষক আন্দোলনের সময় আন্দোলনে যোগ দেওয়া মহিলাদের বিরুদ্ধে বিরূপ মন্তব্য করেছিলেন কঙ্গনা। আন্দোলনকারী মহিলাদের মধ্যে ছিলেন ওই সিআইএসএফ কনস্টেবলের মা’ও। মায়ের বিরুদ্ধে এ হেন মন্তব্য মেনে নিতে পারেননি ওই জওয়ান। সেই আক্রোশ থেকেই এদিন এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন তিনি।
ঘটনার পর বেশ কিছু সময় কেটে গেলেও বলিউড থেকে সেভাবে কেউ পাশে দাঁড়াননি কঙ্গনার। উল্টে অভিযুক্ত সিআইএসএফ জওয়ান কুলবিন্দর কউরকে প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়েছেন সুরকার বিশাল দাদলানি। শুধু তাই নয়, ঘটনার প্রেক্ষিতে ওই জওয়ানের চাকরি গেলে তাঁকে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। নিজের ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে ঘটনার একটা ভিডিও শেয়ার করে ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, “আমি কখনোই হিংসা সমর্থন করি না। তবে আমি ওই সিআইএসএফ কর্মীর রাগের কারণ বুঝি। সিআইএসএফ যদি তাঁর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়, তবে আমি ওঁর চাকরি নিশ্চিত করব, যদি তিনি সেই চাকরি গ্রহণ করতে চান। জয় হিন্দ। জয় জওয়ান। জয় কিষাণ।” আরও একটা ইনস্টা-স্টোরিতে তিনি লেখেন, “যদি মিস কউরকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়, তবে কেউ ওঁর সঙ্গে আমার যোগাযোগ করিয়ে দেবেন, প্লিজ। আমি নিশ্চিত করব যে তিনি ভাল জায়গাতেই কাজ পাবেন।”
যদিও ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন অভিনেত্রী রবিনা ট্যান্ডন, বলিউডের চলচ্চিত্র পরিচালক বিবেক রঞ্জন অগ্নিহোত্রী সহ অনেকেই। এক্স-হ্যান্ডলে বিবেক লিখেছেন, “প্রত্যেক বিবেকবান ব্যক্তির কঙ্গনা রানাউতের সঙ্গে ঘটা এই ঘটনার নিন্দা করা উচিত। কারণ শুধু বিবেকবানরাই বোঝেন এটা গণতন্ত্রের জন্য কতটা বিপজ্জনক।” তিনি আরও লেখেন, “যাঁরা কঙ্গনাকে নিয়ে হাসাহাসি করছেন, তাঁরা অবশ্যই জানেন যে আপনার টুইটও অনেকে পছন্দ করছেন না।” ঘটনার জেরে গ্রেফতার করা হয়েছে কুলবিন্দরকে।
প্রসঙ্গত, কিষাণ মজদুর সংঘর্ষ কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শের সিংহের বোন কুলবিন্দর। তাঁর পরিবার রবারবই কৃষক-রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তাঁর সমর্থনে পথে নেমেছে কৃষক সংগঠনগুলিও। আগামী রবিবার মোহালিতে ‘ইনসাফ যাত্রা’র ডাক দিয়েছেন কৃষক নেতারা। সম্মিলিত কিষাণ মোর্চা, কিষাণ মজদুর মোর্চার তরফে জানানো হয়েছে, তারা কুলবিন্দরের পাশে দাঁড়িয়েছে। ঘটনার নিরপেক্ষ এবং পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবিতে সুর চড়িয়েছেন তাঁরা। সম্মিলিত কিষাণ মোর্চার এক নেতা জগজিৎ সিংহ ডাল্লেওয়াল বলেন, ‘‘আমরা সঠিক তদন্তের দাবি জানাচ্ছি। মহিলা কনস্টেবলের সঙ্গে কোনও অবিচার করা উচিৎ নয়।” মোহালির এসপি অফিসের সামনে রবিবার ‘ইনসাফ’ যাত্রা বার করবেন কৃষকেরা।
উল্লেখ্য, গোটা ঘটনায় মুখ খুলতে শুরু করেছে রাজনৈতিক শিবিরগুলিও। ঘটনার নিন্দা করেছেন মাণ্ডীতে কঙ্গনার বিরুদ্ধে পরাজিত কংগ্রেস প্রার্থী বিক্রমাদিত্য। শিবসেনা (ইউবিটি)-র নেতা সঞ্জয় রাউত বলেছেন, “কেউ ভোট দেয়, কেউ থাপ্পড় দেয়। আসলে কী হয়েছে, আমি জানি না। কনস্টেবল যদি বলে থাকেন যে, ওঁর মা আন্দোলনে বসেছিলেন, তা হলে তা সত্যি। যদি ওঁর মা কৃষকের আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকেন এবং কেউ এর বিরুদ্ধে কিছু বলেন, তা হলে ক্ষোভ তৈরি হওয়া স্বাভাবিক। কৃষক আন্দোলনের সঙ্গে যাঁরা যুক্ত ছিলেন, তাঁরা ভারতেরই ছেলে-মেয়ে। কেউ যদি ভারত মাকে অপমান করে এবং তাতে কেউ ক্ষুব্ধ হয়, তা হলে তা ভাবার বিষয়।”
অন্যদিকে, বলিউডের নীরবতা নিয়ে সমাজমাধ্যমে নিজের ক্ষোভ উগড়ে দেন কঙ্গনা। বলেন, “সকলের নজর রাফা গ্যাংয়ের দিকে, এটা আপনার বা আপনার সন্তানদের সঙ্গেও ঘটতে পারে। আপনি যখন কারও উপর সন্ত্রাসবাদী হামলা উদ্যাপন করেন, তা হলে নিজেও সেই দিনের জন্য প্রস্তুত থাকুন, এটা আপনার কাছেও ফিরে আসবে।” প্রসঙ্গত, রাফায় ইজ়রায়েলি হামলার প্রতিবাদে সম্প্রতি সরব হয়েছিলেন আলিয়া ভট্ট, প্রিয়ঙ্কা চোপড়া, করিনা কপূর-সহ বলিউডের বহু অভিনেতা-অভিনেত্রী। রাফার বাসিন্দাদের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে সমাজমাধ্যমে ‘অল আইস অন রাফা’ শব্দবন্ধে তাঁরাও শামিল হয়েছিলেন। পাশাপাশি আরও একটি পোস্টে কঙ্গনা লেখেন, “প্রিয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি, আপনারা সকলে হয় উদ্যাপন করছেন বা আমার উপর বিমানবন্দরে হামলার ঘটনায় সম্পূর্ণ নীরব। মনে রাখবেন যদি আগামীকাল আপনি আপনার দেশের বা বিশ্বের অন্য কোথাও নিরস্ত্র ভাবে হাঁটছেন এবং কিছু ইজ়রায়েলি/প্যালেস্টাইনি আপনার বা আপনার সন্তানদের উপরে চড়াও হল।… তারপরও দেখবেন আমি আপনাদের বাকস্বাধীনতার জন্য লড়ছি।” পরে ওই পোস্টগুলি সমাজমাধ্যমের দেওয়াল থেকে মুছে দেন কঙ্গনা।
আরও পড়ুনঃ https://thelocaljournalist.com/%e0%a6%b6%e0%a7%81%e0%a6%9f%e0%a6%bf%e0%a6%82-