“বিলকিসের দোষীদের মুক্তি দেওয়া সম্পূর্নরূপে গুজরাট সরকারের একটি ‘প্ররোচনামূলক কাজ'” : সুপ্রিমকোর্ট

আমরা বহু সময়ই কথায় কথায় বলি, “পোড়া দেশের পোড়া বিচারব্যবস্থা।” কথাটা যে নেহাৎ-ই বেঠিক নয় তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। কিন্তু এই পোড়া দেশেও বোধহয় মাঝে মধ্যে রোদ্দুরের ছোঁয়া পড়ে! মনের মধ্যে থেকে কে বা কারা যেন বলে ওঠে না না এখনো সবটা মরেনি, শেষ হয়ে যায়নি সবটা। ২০২৪, সোমবার, ৮ই জানুয়ারি, সুপ্রিমকোর্ট মুক্ত বিলকিস বানুর দোষীদের দুই সপ্তাহের মধ্যে ফের জেল হেফাজতে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ এবং তারই সাথে গুজরাট সরকারের নিন্দে করলো।

২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গার সময় রাধিকাপুর নিজের বাসভূমি ছেড়ে পালান সপরিবারে নিজের এবং নিজের পরিবারের প্রাণ রক্ষার্থে। সেইসময় পথে তাদের ওপর হমলা করে ২০-৩০ জনের একটি সশস্ত্র দল। এই ২০-৩০ জনের দলটি বিলকিসের পরিবারের ওপর হামলা চালায় এবং ধর্ষণ করেন পাঁচ মাসের অন্তঃসত্তা বিলকিস , বিলকসের মা এবং পরিবারের আরো তিন জন মহিলাকে। এবং দেখা যায় এই হামলায় শুধু মাত্র বিলকিস তার সাড়ে তিন বছরের মেয়ে এবং পরিবারের এক পুরুষ সদস্য ছাড়া আর কেউই বেঁচে নেই। ১৭জন সদস্যের মধ্যে ৮জনের মৃত্যু এবং ৬জন নিখোঁজের তালিকায় চলে যান।

বিলকিস তার সাথে হওয়া এই ধর্ষণ এবং পরিবারের সদস্যদের নারকীয় হত্যা এবং ধর্ষণের বিরুদ্ধে FIR করেন । সেই থেকে এই অসম লড়াইয়ের সূচনা ঘটে। বহু ঘাট প্রতিঘাত সহ্য করেও বিলকিস হার মানেননি। তিনি তার অভিযোগ নিয়ে যান সুপ্রিমকোর্টে এবং সুপ্রিমকোর্ট এই মামলার সিবিআই তদন্ত চালানোর নির্দেশ দেন। এবং বিলকসের ১১ জন দোষীদের যাবৎজীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন।

কিন্তু ছন্দপতন ঘটে ঠিক তার কিছু বছর পরেই, 2022 শে বিলকিসের দোষীদের মুক্তি দিয়ে দেয় গুজরাট সরকার। ধারা ৪৩২ অনুযায়ী রাজ্য সরকার কোনো দোষীকে মুক্ত দেওয়ার ক্ষমতা রাখে কিন্তু সেই দোষী যদি কোনো বড় সড় মামলার সাথে যুক্ত থাকে তবে সেই দোষীকে অন্তত পক্ষে ১৪ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করতেই হবে নচেৎ মুক্তি কোনোভাবেই সম্ভব নয়। বিলকিস মামলার এক দোষী রাঁধেশ্যাম শাহ সুপ্রিমকোর্টের কাছে আবেদন করে মুক্তির, কিন্তু তখন সুপ্রিম কোর্টের থেকে নির্দেশ দেওয়া হয় যে এই বিষয়টি এখন সম্পূর্ণভাবে গুজরাট সরকারের ওপর নির্ভর করছে, গুজরাট সরকার চাইলে দোষীদের তারা মুক্তি দিতে পারেন , এবং সেই সময় রাঁধেশ্যাম গুজরাট সরকারের দ্বারস্থ হয়, কিন্তু গুজরাট সরকার প্রথমে মানা করে দেয় কারণ বিলকিস মামলা সুপ্রিমকোর্টে ওঠার আগে মহারাষ্ট্র-এর একটি কোর্টে এই মসমলার বিচার চলছিল, এবং আইনত দোষীদের মুক্তি দেওয়ার অধিকার একমাত্র মহারাষ্ট্র সরকারের কাছেই আছে। রাঁধেশ্যাম এই একই আপিল নিয়ে মহারাষ্ট্র সরকারের কাছে গেলেও মহারাষ্ট্র সরকার সরাসরি মানা করে দেয়। কিন্তু তারপরেও রাঁধেশ্যাম গুজরাট সরকারের কাছে যান এবং গুজরাট সরকার রাঁধেশ্যাম সহ বিলকিসের আরো ১০জন দোষীকে মুক্তির নির্দেশ দেন।

২০২২-এর বিলকিসের দোষীদের মুক্তি দেওয়ার বিরুদ্ধে বিলকিস আবার সেপ্টেম্বর মাসে পিটিশন দেন সুপ্রিম কোর্টে। এবং সেই সময় TMCPএর নেত্রী তথা সংসদ মহুয়া মৈত্র গুজরাট সরকারের এই দোষীদের মুক্তি দেওয়ার বিরুদ্ধে PLI দেন কোর্টে।

তারপর আবার প্রায় এক বছর পর ৪ই জানুয়ারি ২০২৪শে, সুপ্রিম কোর্ট বিলকিসের দোষীদের দুই সপ্তাহের মধ্যে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দেন, এবং তাই সাথে তীব্র ভাষায় নিন্দে করেন গুজরাট সরকারের, এবং কোর্ট সরাসরি বলেন গুজরাট সরকারের এই কাজটি সম্পূর্ণরূপে “প্ররোচনামূলক কাজ”।