প্রয়াত উস্তাদ রাশিদ খান, মাত্র ৫৬ বছরেই সঙ্গীত জগতের সনামধন্য তারকার ছন্দ-পতন

আর কোনদিনই গান শোনা যাবেনা সেই পরিচিত কণ্ঠ। ‘আয়োগে যাব তুম ও সাজনা’ থেকে শুরু করে ‘সাজনা বারসে হ্যায় কিউ আখিয়া’ এমন‌ অনেক প্রিয় গান গুলোই কেবল থেকে যাবে স্মৃতি হয়ে। কিন্তু তিনি আর ফিরে আসবেন না। চিরনিদ্রায় চলে গিয়েছেন শিল্পী। মাত্র ৫৬ বছর বয়সেই নিভে গেল জীবনপ্রদীপ। ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে ২২ নভেম্বর দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারী হাসপাতালে ভর্তি হন শিল্পী। শারীরিক অবস্থার অবনতির জন্য মঙ্গলবার ভোর রাতেই ভেন্টিলেশনে (৯জানুয়ারি) পাঠানো হয় তাঁকে । কিন্তু চিকিৎসকেদের সবচেষ্টা বিফলে পাঠিয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি ওই দিন ৩টে ৪৫ মিনিটে।
গত কয়েক দশক ধরে রশিদ খান‌ ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে নতুন মাত্রা যোগ করেছেন তাঁর গানের মাধ্যমে। তাঁর এই সংঙ্গীতের প্রতি অবদানের জন্য তিনি একাধিক পুরস্কার ও সম্মান পেয়েছেন বহু। পদ্মশ্রী সম্মানে থেকে শুরু করে ২০০৬ সালে তিনি পেয়েছিলেন সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড, এছাড়া ২০২২ সালে পেয়েছিলেন পদ্মভূষণ।
মাত্র ৮ বছর বয়সে দিল্লিতে প্রথম এক কনসার্টে গান গেয়েছিলেন রশিদ খান। তারপর থেকে সঙ্গীত চর্চায় নিজেকে ভাসিয়ে দিয়েছিলেন এই শিল্পী। বহু সিনেমাতেও প্লেব্যাকে গান গেয়েছেন তিনি। করিনা কাপুর খান এবং শাহিদ কাপুরের ‘জব উই মেট’ ছবিতে ‘আয়ো গে জব তুম’ গানটি সবচেয়ে স্মরণীয়। এক নামে সকলেই মোটামুটি গানটার সাথে পরিচিত। উত্তরপ্রদেশে জন্ম হলেও কলকাতাকে ভালবেসে থেকে গিয়েছিলেন। বিয়েও করেছেন এক বাঙালি মহিলাকে। রশিদে খান যে কলকাতার বড্ড আপন এবিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

ওই দিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, ‘চিকিৎসকরা চেষ্টা করেছেন, কিন্তু এটা বিরাট ক্ষতি। বাংলাকে ভালবাসতেন রাশিদ, তাই বাংলাতেই থেকে গেলেন। আর ওঁর গান আর শুনতে পাব না, খুব খারাপ লাগছে।’ শিল্পীর শেষকৃত্যের প্রসঙ্গে বলতে বলতে শোকস্তব্ধ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমার গায়ে কাঁটা দিচ্ছে। আমি ভাবতে পারছি না রাশিদ আর নেই। খুব খারাপ লাগছে।’
আজ সকালে তাঁর দেহ পিস ওয়ার্ল্ড থেকে রবীন্দ্র সদনে নিয়ে আসা হয়। ফুলে সজ্জিত দেহ গান স্যালুটের পর দেহ নিয়ে যাওয়া হয় বাড়িতে। সঙ্গীত জগতের আরও একটি ছন্দ-পতন ঘটে গেল এভাবেই।