‘বাংলা’-ধ্রুপদী ভাষা, ‘গঙ্গাসাগর মেলা’ জাতীয় মেলার স্বীকৃতি চাই… মুখ্যমন্ত্রীর চিঠি প্রধানমন্ত্রীকে।

প্রথমেই বলে দেওয়া প্রয়োজন ধ্রুপদী ভাষা কী অর্থাৎ ইংরেজিতে যাকে বলা হয়- ‘ক্ল্যাসিকাল ল্যাঙ্গুয়েজ’। খুব স্পষ্ট ভাবে বলা যায় যে সকল ভাষা অতি প্রাচীন কমপক্ষে দেড় হাজার বছর অথবা তার থেকেও বেশি পুরোনো, যে সকল ভাষায় প্রাচীন সাহিত্য লেখা হয়েছে এবং অবশ্যই মে ভাষার প্রাচীন সাহিত্যিক ঐতিহ্য অন্য কোনো ভাষার প্রাচীন সাহিত্যিক ঐতিহ্যের অংশ নয়, যে সাহিত্য স্বাধীন ভাবে গড়ে উঠেছে । যেমন – সংস্কৃত, তামিল, চিনা, গ্রীক এবং আরবী(তবে এই ব্যাখ্যা নিয়ে ভাষাবিজ্ঞানী দের মধ্যেও বিতর্ক আছে)’বাংলা ভাষাকেও ধ্রুপদী ভাষা হিসেবে স্বীকৃতির দাবি’- এবং এই দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “তামিল, সংস্কৃত, তেলেগু, মালয়ালাম, ওড়িয়া এগুলি ধ্রুপদী ভাষা হিসেবে স্বীকৃত। বাংলা ভাষার জন্ম ও বিবর্তন হয়েছে আড়াই হাজার বছর ধরে। আমরা প্রামাণ্য গবেষণা করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে পাঠাচ্ছি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাচ্ছি, বাংলাকে ক্লাসিক্যাল ভাষা বা ধ্রুপদী ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের জন্য। আমাদের আগেই এই স্বীকৃতী পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আগে যারা ছিলেন, তাদের অপদার্থতা। আগে যারা ক্ষমতায় ছিলেন, তারা বাংলা ভাষা নিয়ে ভাবেননি। আমি আজ প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছি।”

একই সাথে রাজ্যের নাম পরিবর্তন প্রসঙ্গেও কেন্দ্রকে নিশানা করেন মুখ্যমন্ত্রী এবং তিনি বেশ কিছু প্রশ্ন তুলে বলেন “রাজ্যের নাম দু-বার বিধানসভায় পাস করেছে। তাও এটা আটকে রয়েছে। ওরা কিছুতেই হতে দিচ্ছে না। বোম্বে থেকে মুম্বই হয়েছে অনেকদিন হল। কিন্তু আমাদের কেন হবে না? বাংলা কেন এটা পাবে না? জাতীয় স্তরে কোনও বৈঠকে গেলে আমাদেরকে শেষ পর্যন্ত বসে থাকতে হয়, যেহেতু আমাদের নামের প্রথম অক্ষর ডব্লিউ। আমরা সবার শেষে বলবার সুযোগ পাই। সেখানে বাংলা হলে অনেক অগ্রাধিকার পাবে।” রাজ্যের নাম পরিবর্তন প্রসঙ্গে পাঞ্জাব এর প্রসঙ্গ টেনে এনে তিনি বলেন, “পাকিস্তানেও একটা পাঞ্জাব প্রদেশ রয়েছে, আমাদের দেশেও পাঞ্জাব আছে। সেটা যদি থাকতে পারে, তাহলে বাংলাদেশ বলে একটা দেশ আছে, কিন্তু তাতে রাজ্যের নাম বাংলা হলে আপত্তির কী? অন্য রাজ্য স্বীকৃতি পেলে আমরা কেন স্বীকৃতি পাব না?”

প্রসঙ্গত, ২০১৬-র অক্টোবরে রাজ্যের নাম বদল করার প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল বিধানসভায়।বাংলা, ইংরেজি ও হিন্দি ৩টি ভাষাতে ৩টি নাম বাছাই করা হয়- বঙ্গ, বেঙ্গল ও বঙ্গাল। কিন্তু রাজ্যের সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেনি কেন্দ্র। পৃথক নাম চলবে না বরং ৩টি ভাষাতেই এক নাম হতে হবে বলে রাজ্যকে জানায় কেন্দ্র। এরপরই রাজ্য সরকার রাজ্যের নাম ৩ ভাষাতেই ‘বাংলা’ রাখার সিদ্ধান্তে আসেন। সর্বসম্মতির ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়ে নাম বদলের সেই প্রস্তাব স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে পাঠায় রাজ্য। কিন্তু রাজ্যের নাম ‘বাংলা’ করার বিষয়ে সিলমোহর এখনও দেওয়া হয়নি কেন্দ্রর পক্ষ থেকে।
কেন্দ্রের সেই সিদ্ধান্তে হতাশা প্রকাশ করেন সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ও। তাঁর বক্তব্যে তিনি বলেন, “বাংলা নাম খারিজের সিদ্ধান্ত ঠিক হল না।” উল্লেখ্য, ‘পশ্চিমবঙ্গ’ নামটি ইংরাজিতে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল’ হওয়ায় বিভিন্ন সরকারি ক্ষেত্রে পরে সুযোগ পায় রাজ্য। নাম বদলে ‘বাংলা’ হলে, সেক্ষেত্রে ইংরাজিতে নাম শুরু হবে ‘B’ দিয়ে (Bangla)। ফলে সরকারি অনেক ক্ষেত্রে রাজ্য আগে সুবিধা পাবে বলে মত বিশেষজ্ঞ মহলের। পাশাপাশি গঙ্গাসাগর মেলা জাতীয় মেলার স্বীকৃতি চেয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।কয়েকদিন আগেই গঙ্গাসাগরের প্রস্তুতি দেখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী গঙ্গাসাগর মেলাকে নিয়ে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগ করেছিলেন । তিনি বলেন, কুম্ভ মেলাকে কোটি কোটি টাকা দিলেও গঙ্গাসাগরকে এক পয়সাও সাহায্য করে না কেন্দ্রীয় সরকার । সেই নিয়ে গতকাল অর্থাৎ বৃহস্পতিবার আরও একবার সরব হয়েছিলেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান ।এ দিন নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি দাবি করেন, “গঙ্গাসাগর মেলা নিয়ে আগেও আমি কেন্দ্রীয় সরকারকে অনেক চিঠি দিয়েছি ৷ আজ আরও একবার চিঠি দিচ্ছি । গঙ্গাসাগর মেলাতে আমরা প্রায় 250 কোটি টাকা এ বছর খরচ করেছি । কুম্ভ মেলা স্বীকৃতি পেয়েছে, তাতে আমরা খুশি । কিন্তু কুম্ভ মেলা প্রত্যেক বছর হয় না । গঙ্গাসাগর মেলা প্রত্যেক বছর হয় । গঙ্গাসাগর মেলায় প্রায় বিভিন্ন রাজ্য থেকে লাখো লাখো মানুষ আসেন ।”মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, “কোন দিকে কম আছি আমরা । এক কোটি মানুষ এখানে আসে । সারা বছর যদি ধরি তাহলে সেটা অনেক । গত বছরও আশি লক্ষেরও বেশি মানুষ এসেছিল । এ বছর আমার ধারণা, যেহেতু কুম্ভমেলা নেই, তাই গঙ্গাসাগরে জমায়েত এক কোটি ছাড়িয়ে যাবে ।” মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন তুলেছেন, অন্যেরা সাহায্য পেলে বাংলা কেন সাহায্য পাবে না । কেন গঙ্গাসাগর জাতীয় মেলা হবে না !

এপ্রসঙ্গে রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন -“মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন আড়াই হাজার বছর অর্থাৎ যীশু খ্রীষ্টের জন্মের ৫০০ বছর আগে থেকে নাকি বাংলা ভাষার বিবর্তন গবেষণা ইত্যাদি হচ্ছে। কিভাবে বাংলা ভাষা আড়াই হাজার বছর আগে থেকে বিবর্তন হতে লাগলো, তা খুঁজে বার করতে আরো একটা সিবিআই তদন্ত হওয়া উচিত!”সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মতে, “ভোট এসে গিয়েছে বিজেপির আমন্ত্রণের নামে হিন্দুত্ব নিয়ে হৈচৈ করছে,আর মুখ্যমন্ত্রী গঙ্গাসাগর ,বাংলার নাম, ভাষা এসব ফের সামনে এনে পাল্টা একটা আবেগ তৈরি করতে চাইছেন। একদিকে বলেছেন গঙ্গাসাগর তীর্থকর মাকুব আবার অন্যদিকে কেন্দ্রীয় সহায়তা পাওয়ার আশায় জাতীয় মেলা স্বীকৃতি চাইছেন।বাংলা নিয়ে যা যা বলেছেন তার তো ইতিহাস- ভূগোল ঠিক নেই ভুলভাল বলা গুলিয়ে দেওয়া এটাই ওঁর বৈশিষ্ট্য!”