শিল্পের মাধ্যমেই দিতে চাই সৌভাতৃত্বের বার্তা

“মোরা একই বৃন্তের দুটি কুশম হিন্দু মুসলমান”- দশক পূর্বে গানটি লিখেছিলেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তারপর থেকে বহু জল বয়ে গেছে গঙ্গার বুক দিয়ে। বহু মায়ের কোল খালি হয়েছে তো কোথাও বহু সন্তান হয়েছে অনাথ। তবুও জীবন চলে গেছে তার আপন গতিতে, ক্ষত সেরে উঠেছে ধীরে ধীরে।

সালটা ছিল ১৯৯২, আর ৬ই ডিসেম্বর , ধ্বংস করা হলো বাবরি মসজিদ। এই নারকীয় ধ্বংসকাণ্ডে প্রাণ গেলে শয়ে শয়ে মানুষের। বলা হলো এই ভূমি নাকি স্বয়ং শ্রী রামের জন্মভূমি এবং সেখানে নাকি জোর করে এই মসজিদ বানিয়ে রাখা হয়েছে। দেশজুড়ে সমালোচনা করা হলো বটে, প্রতিবাদও হলো বহু কিন্তু বিচার পাওয়া গেল কৈই! যদিও এদেশের সংবিধানে “ধর্মনিরপেক্ষ” এবং “বহুজাতিক” -এর মতন ভারী ভারী শব্দগুলো লেখা থাকলেও সেসব শব্দগুলির বাহ্যিক প্রয়োগ খুব কমই দেখা যায়। তবে যাইহোক এই ক্ষতও সেরে উঠেছে ধীরে ধীরে । মানুষ আবার ফিরে গেছে নিজের স্বাভাবিক ছন্দে।

হিন্দু ধর্মমত অনুযায়ী বিষ্ণুর সপ্তম অবতার শ্রী রাম, যার জন্ম দ্বাপর যুগে রাজা দশরথ-এর ঘরে হয়েছিল , মনেকরা হয় আজকের উত্তর প্রদেশের অযোধ্যাই সেই জন্মস্থান। কয়েক হাজার একর জমি নিয়ে তৈরি হওয়া এই মন্দিরের উধবোধন হবে আগামী বছরের ২৪শে জানুয়ারি । শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিও তুঙ্গে। তুঙ্গে রাজনৈতিক তরজাও। তবে এত কিছুর মধ্যেও আরো একবার প্রমাণিত হলো শিল্পীর কোনো জাত ধর্ম নেই। পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দা মহম্মদ জামালুউদ্দিন এবং তার ছেলে বিট্টু তৈরি করছেন রাম মন্দিরের পূজনীয় রামের মূর্তি।


জামালুউদ্দিনের কাছে জাত কিংবা ধর্ম নয় শিল্পই সবচেয়ে বড়। যদিও বর্তমানে ভারতের রাজনৈতিক অবস্থা এবং সেই পরিপ্রেক্ষিতে মুসলিম জাতি গোষ্ঠীর অবস্থার কথা উঠতেই তিনি বলেন , ভারত একটি বহু জাতীক বহু ভাষিক মানুষের দেশ, সম্প্রীতির দেশ সৌভাতৃত্বের দেশ এবং তিনি সমস্ত জাত পাতের উর্ধে গিয়ে একজন শিল্পী এবং তিনি শিল্পী হিসেবে তার শিল্পের মাধ্যমেও সৌভাতৃত্বের বার্তাই পৌঁছে দিতে চাইছেন সারা দেশে। এবং তারসাথে শিল্পী এও জানায় যে ভগবান রামের মূর্তি গড়তে পেরে তিনি অসম্ভব খুশি।